বাংলাদেশের ১২০০ নারী ব্যবসায়ীকে আর্থিক সাহায্য দেবে বিশ্বব্যাংক

ঢাকা, বাংলাদেশ, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ – দেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন বাংলাদেশের নারী মালিকানাধীন ব্যবসাসমূহের বাজার ও কর্পোরেট ভ্যালু চেইনে আরো বেশি প্রবেশাধিকার, রবিবার কর্পোরেট কানেক্ট ২০২০ সভা ও বাণিজ্য মেলায় বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপ এ কথা বলেন।

সদ্যসমাপ্ত একটি পাইলট প্রজেক্টের সাফল্যের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক গ্রুপ ও উইকানেক্ট ইন্টারন্যাশনাল আজ যৌথভাবে একটি প্রকল্পের সূচনা করে, যা ১২০০ নারী মালিকানাধীন উদ্যোগকে সম্ভাবনাময় স্থানীয় বৃহৎ ও বহুজাতিক সদস্য বায়ারদের সাথে সংযুক্ত করতে সহায়তা করবে। এটি এন্টারপ্রাইজসমূহকে ভ্যালু চেইনের সাথে সংযুক্ত করতে ও ব্যবসা সম্প্রসারণে কাজ করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে উইমেন এন্ট্রেপ্রেনিউর ফাইন্যান্স ইনিশিয়েটিভ (উই-ফাই)।

পূর্ববর্তী পাইলট প্রজেক্টটিতে ১৫০ জনেরও অধিক নারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং বিভিন্ন নেটওয়ার্কিং সুবিধার মাধ্যমে বৃহৎ কর্পোরেশনের সাথে সংযোগ সাধনের সুবিধা প্রদান করা হয়। ৯০ শতাংশ সুবিধাভোগীই এর মধ্য দিয়ে উপকৃত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। সেই সাথে প্রকল্পটির মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছে দেশের প্রথম সাপ্লায়ার ডাইভার্সিটি এডভাইজরি কমিটি।

আইএফসির বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার ওয়েন্ডি ওয়ার্নার সভায় বলেন, “বাংলাদেশে কেবলমাত্র ৫ শতাংশ বৈধ মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি কোম্পানী নারী মালিকানাধীন।’’ “উদীয়মান বাজারসমূহে বিনিয়োগকারী হিসেবে, আইএফসি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে কোম্পানী ও অর্থনীতির বিকাশে বেসরকারি খাতে আমাদের অবশ্যই নারী পুরুষের ব্যবধান কমাতে হবে”।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের জেন্ডারবিষয়ক সিনিয়র পরিচালক ক্যারেন গ্রাউন বলেন, “ব্যবসায়ের সাফল্যের জন্যে সাপ্লাই চেইন কৌশল নির্মাণ করা অত্যন্ত জরুরী, কিন্তু এসব চেইনে নারী মালিকানাধীন ব্যবসাসমূহ গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়েও প্রায়ই অবহেলিত”। তিনি আরো বলেন, “আগামী তিন বছরে প্রকল্পটি কর্পোরেট ভ্যালু চেইনে নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির উদ্দ্যেশ্যে বাংলাদেশি নারী উদ্যোক্তাদের একটি ডেটাবেজ তৈরিতে সহায়তা করবে। যতই এর মাধ্যমে নারী মালিকানাধীন ব্যবসাসমূহকে সদস্য ক্রেতাদের সাথে যুক্ত করা যাবে, ততই নারী উদ্যোক্তা ও বাংলাদেশ উভয়ের জন্যই তা সুফল বয়ে আনবে।”

সম্মেলনে নীতিনির্ধারক ও ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নেন এবং ভ্যালু চেইনের বৈচিত্র্য বৃদ্ধির কার্যকর উপায়সমূহ সম্বন্ধে আলোচনা করেন। একই সাথে নেটওয়ার্ক তৈরি ও কর্পোরেট প্রকিউরমেন্টে সংযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য একটি বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হয়।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন,“সম্মেলনটি নারী উদ্যোক্তাদের ভ্যালু চেইনে সাফল্য অর্জন এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে নারী উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করতে সরকার, বেসরকারি খাত ও প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগীদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে”। “এটি আরো বেশি সংখ্যক কোম্পানীকে নারী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে স্থানীয়ভাবে উৎপন্ন বিভিন্ন অভিনব পণ্য ও সেবা ক্রয়ে উৎসাহিত করবে বলে আশা করছি”।

বৈশ্বিকভাবে, নারী মালিকানাধীন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পসমূহ সরকার ও বৃহৎ কর্পোরেশনসমূহের সরবরাহকারীদের পেছনে ব্যয়কৃত অর্থের এক শতাংশেরও কম আয় করে। সদস্য বায়ারদের সাথে নারী উদ্যোক্তাদের সংযোগ বৃদ্ধি করা ভ্যালু চেইনের বৈচিত্র্য বাড়াতে এবং সেই সাথে ন্যায়সঙ্গত ও ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আনয়নে ভূমিকা রাখবে।

উইকানেক্ট ইন্টারন্যাশনালের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও এলিজাবেথ এ ভ্যাজকেজ বলেন, “উইকানেক্ট ইন্টারন্যাশনাল জেন্ডার-অন্তর্ভুক্তিমূলক সোর্সিং এ ভূমিকা রাখতে পারায় অত্যন্ত আনন্দিত, যা বায়ারদেরকে প্রতিযোগিতায় সুবিধা পেতে ও নারী মালিকানাধীন শিল্পসমূহকে আরো বৃহৎ বাজারে তাদের পণ্য ও সেবা নিয়ে আসতে সাহায্য করবে”।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপ এবং বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে উইকানেক্ট ইন্টারন্যাশনালের যৌথ উদ্যোগে এবং উই-কানেক্টের সহযোগিতায় সম্মেলন ও বাণিজ্য মেলাটি আয়োজিত হয়।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপ
বিশ্বব্যাংক গ্রুপ অতিদারিদ্র্য দূরীকরণ ও শেয়ারড প্রসপারিটি অর্জনের বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। এটি পাঁচটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিতঃ বিশ্বব্যাংক, যার মধ্যে আছে ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর রিকন্সট্রাকশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইবিআরডি) এবং ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন (আইডিএ); ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি); মাল্টিল্যাটেরাল ইনভেস্টমেন্ট গ্যারান্টি এজেন্সী (এমআইজিএ); এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটলমেন্ট অফ ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউটস (আইসিএসআইডি)। একসাথে ১০০টিরও বেশি দেশে এসব প্রতিষ্ঠান অর্থায়ন, পরামর্শ ও অন্যান্য সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে যা দেশসমূহকে উন্নয়নের আশু সমস্যাসমূহ সমাধানে সাহায্য করছে। আরো তথ্যের জন্য দেখুন www.worldbank.orgwww.miga.org, and www.ifc.org.

উই-ফাই
উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউরস ফাইন্যান্স ইনিশিয়েটিভ (উই-ফাই) ১৪টি সরকার ও ৮টি বহুমুখী উন্নয়ন ব্যাংকের একটি সহযোগীতামূলক অংশীদারী উদ্যোগ। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের অংশ হিসেবে উই-ফাই নারী উদ্যোক্তাদের সমস্ত বাধা দূরীকরণ- অর্থায়ন, বাজার, প্রযুক্তি ও পরামর্শের সুযোগ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বিলিয়নেরও বেশি ডলার অবমুক্তকরণে এবং একই সাথে এটি নীতিমালা, আইনী ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামোকে শক্তিশালী করতেও কাজ করে যাচ্ছে। উই-ফাই এর অন্যতম বাস্তবায়ন সহযোগী হিসেবে আইএফসি নারী মালিকানাধীন অথবা নারী পরিচালিত প্রতিষ্ঠানসমূহের আর্থিক সুবিধা বিস্তৃতকরণ ও বাজারে প্রবেশের সুযোগ বৃদ্ধিতে বেসরকারি খাতে বায়ারদের বিনিয়োগ ও পরামর্শ সুবিধা প্রদান করে। সেই সাথে এটি উচ্চ প্রবৃদ্ধিসম্পন্ন ব্যবসায় পরিচালনায় নারী উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। আরো তথ্যের জন্যে দেখুন www.we-fi.org.

উইকানেক্ট ইন্টারন্যাশনাল সম্পর্কে
উইকানেক্ট ইন্টারন্যাশনাল নারী মালিকানাধীন ব্যবসায়সমূহকে বৈশ্বিক ভ্যালু চেইনে সাফল্য অর্জনে সহায়তা করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অবস্থিত নারীদের ব্যবসায়িক উদ্যোগ চিহ্নিতকরণ ও তাদের শিক্ষাদান, নিবন্ধন ও স্বীকৃতিপ্রদান করে, যার অন্তত ৫১ শতাংশ এক বা একাধিক নারী মালিকানাধীন, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত। পাশাপাশি এটি তাদেরকে মানসম্মত সদস্য বায়ারদের সাথে সংযুক্ত করে। সদস্য বায়াররা ১ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলারেরও বেশি বার্ষিক ক্রয়ক্ষমতা বহন করে।