সরকারী এবং বেসরকারী যৌথ উদ্যোগে শক্তিশালী হচ্ছে বাংলাদেশের নারী মালিকানাধীন ব্যবসাগুলো

গত কয়েকদশকে বাংলাদেশের নারীরা ঘরের গন্ডি পেরিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অংশগ্রহনের মাধ্যমে অসাধারণ উন্নতি করছে।

ব্যবসার মালিকানার ক্ষেত্রে যদিও এটা মাত্র শুরু তবুও বাংলাদেশের প্রায় আশি লক্ষ ব্যবসার মধ্যে ৯৯.৯৩ শতাংশ মাঝারি ও ক্ষুদ্র উদ্যোগ। এর মধ্যে ৭.২% নারী মালিকানাধীন ও পরিচালিত (এডিবি৪ ২০১৬)। তবে যে সামান্য অগ্রগতি হয়েছিল তা কোভিড ১৯ মহামারী দ্বারা আগের অবস্থায় ফিরে গিয়েছে। ব্র্যাকের একটি জরিপ অনুসারে ,৬৫ শতাংশ উদ্যোক্তার কোনো আয় হয়নি, ৩৩ শতাংশের লকডাউনে ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ ছিল এবং ৮৬ শতাংশই ব্যবসায়িক মন্দা মোকাবেলায় অসমর্থ ছিল।

মহামারীর অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও বাংলাদেশের জিডিপি ৫.৮% বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বৃদ্ধির মাত্রা চমকপ্রদ হলেও প্রকৃতপক্ষে আরো বৃদ্ধি আশা করা যায়। ম্যাককিনসির এক রিপোর্টে (দা পাওয়ার অফ প্যারিটি) বলা হয়েছে বাংলাদেশে জেন্ডার সমতায়ন নিশ্চিত করার ফলাফল ব্যবসা ও একইসাথে জিডিপিতে ৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি বয়ে আনতে পারে যা বাড়তি প্রায় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এর সমান।

যদিও তা অর্জন করা সহজ হবে না। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর মত বাংলাদেশের নারীরাও সমাজের প্রচলিত বদ্ধমূল ধারণা, লিঙ্গবৈষম্য এবং একইসাথে বড় কর্পোরেশনগুলোর সাথে ব্যবসায়ের সুযোগের অভাব- এই সমস্যাগুলোর শিকার।

উল্লেখিত অবস্থা এ চিত্র দ্বারা আরো পরিষ্কারভাবে ফুটে ওঠেঃ যদিও বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ বেসরকারি ব্যবসা নারী মালিকানাধীন, এই ব্যবসাগুলোর সম্মিলিত আয় বড় কর্পোরেশনগুলো ও সরকারি বায়ারদের ব্যয়ের এক শতাংশেরও কম।

বাংলাদেশী নারীদের সামগ্রিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা উপলব্ধি করার সবচেয়ে বড় সুফল হবে এর দ্বারা কর্পোরেট ভ্যালু চেইনে নারী পুরুষ ব্যবধান দূর করা এবং বাজারে নারী মালিকানাধীন ব্যবসাগুলোর সহজে অংশ নেয়ার সুযোগ বৃদ্ধি পাওয়া। সরকারি ও বেসরকারি খাতের (এনজিও দ্বারা সমর্থিত) মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই সক্রিয় সাপ্লায়ার বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তির কৌশলগুলো সফল হতে পারে।

কর্পোরেট কানেক্ট বিশ্বব্যাংকের এমনই একটি প্রকল্প যা উইমেন এন্টারপ্রেনারস ফাইন্যান্স ইনিশিয়েটিভ এর অর্থায়নে নারী মালিকানাধীন এসএমই ব্যবসাকে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক করপোরেশনের সাথে ব্যবসার জন্য টেকসই বাজার সংযোগ তৈরি করার চেষ্টা করে।

উইকানেক্ট ইন্টারন্যাশনাল একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান যা প্রথম তিন ধাপে বাংলাদেশের নারী মালিকানাধীন এসএমই ব্যবসা ও কর্পোরেট বায়ারদের ক্রয় সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলো বোঝার জন্য ইকোসিস্টেম গবেষণা পরিচালনা করে নারী মালিকদের হাতে অর্থ দেয় যাতে তারা বিশ্বব্যাপী বাজারে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হয়। নারী মালিকানাধীন ব্যবসায়িক প্রস্তুতি প্রশিক্ষণের জন্য এই গবেষণাটি পাইলট প্রোগ্রাম চালু করে যা স্থানীয় বায়ারদের জন্য জেন্ডার অন্তর্ভুক্তিকরণ প্রোগ্রাম এবং দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যবসায়িক সংযোগ উন্নত করে।

পুর্ববর্তী পর্যায়গুলোর সাফল্যের উপর ভিত্তি করে চতুর্থ পর্যায়ের কার্যক্রমগুলো মার্চ মাসে শুরু হয়েছিল এবং নারী ব্যবসায়ীদের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ চালু হয়েছিল জুনের শেষে। প্রজেক্টটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে উইকানেক্ট ইন্টারন্যাশনাল এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। উইকানেক্ট ইন্টারন্যাশনাল এর ভূমিকা হবে ব্যবসায়িক বুদ্ধিমত্তা ভাগ করা এবং জটিল কর্পোরেট ভ্যালু চেইনে নারীরা যাতে সহজভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে সেজন্য নতুন বাজার সম্ভাবনাগুলোর একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা। মহিলা ব্যবসায়ীদের দক্ষতা নির্মানের সরঞ্জাম সরবরাহের পাশাপাশি উইকানেক্ট ইন্টারন্যাশনাল স্থানীয় এবং আঞ্চলিক করপোরেশনগুলোকে তাদের ভ্যালু চেইনে বৈচিত্র্য আনতে এবং বাংলাদেশি নারী মালিকানাধীন ব্যবসায়গুলোর সাথে সংযোগ বাড়াতে কাজ করে যাবে।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় তার কয়েক দশকের শিক্ষাদানের অভিজ্ঞতা থেকে মহিলা ব্যবসায়ীদের জন্য একটি ‘সাপ্লায়ার প্রস্তুতি প্রশিক্ষণ’ কর্মসূচির মাধ্যমে এই যৌথ উদ্যোগে অবদান রাখবে যার মধ্যে অর্থ ব্যবস্থাপনা, সিদ্ধ্বান্ত গ্রহণ, নেতৃত্ব এবং মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা অন্তর্ভুক্ত।

উক্ত যৌথ উদ্যোগের অগ্রগতি এখন পর্যন্ত প্রশংসনীয়। এখন পর্যন্ত ৫০০ বায়ার ও সাপ্লায়ারদের সংযোগ তৈরি করা হয়েছে, ১৬৬ জন নারী ব্যবসা মালিককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে, ১৬ টি বড় কর্পোরেশন সরবরাহকারী বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি (SD&I) অঙ্গীকারপত্রে স্বাক্ষর করেছে এবং নারী মালিকানাধীন ব্যবসাগুলো ম্যাচমেকিং সেশনের মাধ্যমে ২০টি চুক্তি লাভ করেছে।

কর্পোরেট কানেক্ট তার চতুর্থ ধাপে পরবর্তী তিন বছরে ৭০০ জনেরও বেশি নারীকে সরবরাহের জন্য প্রস্তুত হতে প্রশিক্ষণ দেবে এবং কমপক্ষে ৪০ টি বড় কোম্পানিকে তাদের জেন্ডার অন্তর্ভুক্তিকরণ কৌশল উন্নত করতে সাহায্য করবে।

যদিও এটা মাত্র শুরু তবু আমরা যদি সম্মিলিতভাবে জোরদার প্রচেষ্টা না চালাই তাহলে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি ৫(জেন্ডার সমতায়ন) অর্জনে বাংলাদেশের অনেক সময় লাগবে। বাংলাদেশসহ অন্য সকল দেশে যেখানে তারা কাজ করে সর্বত্রই এই লক্ষ্যটি উইকানেক্ট ইন্টারন্যাশনাল টিমকে সামনে অগ্রসর হতে প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করে চলেছে।  

এলিজাবেথ এ ভাজকেজ উইকানেক্ট ইন্টারন্যাশনালের সিইও এবং কো-ফাউন্ডার। উইকানেক্ট ইন্টারন্যাশনাল এমন একটি নেটওয়ার্ক যা বিশ্বের নারী-মালিকানাধীন ব্যবসা ও যোগ্য বায়ারদের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে তোলে।